,

এসিল্যান্ডের ‘অনুমতিতে’ অবৈধভাবে বালু তুলছেন বিএনপি নেতারা

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মধুমতি নদী (বিলরুট ক্যানেল) থেকে অবৈধভাবে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে দিনরাত বালু তোলা হচ্ছে। এসিল্যান্ডের ‘অনুমতিতে’ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম খান ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রাজু এ বালু উত্তোলন করছেন।

সরকারি জায়গা ভরাটের নামে এসব বালু বিক্রি অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। এসিল্যান্ডের যোগসাজসে সরকারি নদীর বালু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই রাজনৈতিক নেতারা।

এদিকে, বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী- সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক-মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনি¤œ এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না। এ ছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিক্রির জন্য খননের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হলেও বালু তোলা যাবে না। আইন অমান্যকারীকে দুই বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।

রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের বানিয়ারচর বাজার এলাকায় মধুমতি নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। কোনো ধরণের সরকারি অনুমতি ছাড়াই ২ সপ্তাহ ধরে চলছে বালু তোলার মহোৎসব। প্রতিদিন ১০-১২ বাল্কহেড বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যা ২ থেকে ৩ লাখ ঘনফুট, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এসব বালু সরকারি জায়গা ভরাটের কথা বলে বাল্কহেড বোঝাই করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের যোগসাজসে মধুমতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বিএনপি নেতারা। ফলে নদীপাড় ভাঙনসহ আশপাশের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না তারা। বালু উত্তোলনের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা।

মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম খানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি আর আমার সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রাজু দু’জনে মিলে কাজটি করতেছি। এসিল্যান্ড স্যারের সাথে মৌখিক চুক্তি হয়েছে। তিনি জায়গা পরিমাপ করে রেখেছেন। সে অনুযায়ী আমাদের টাকা দেবেন।’
নদীতে ড্রেজার বসানোর অনুমতির বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসিল্যান্ড স্যার বিষয়টি জানেন। তবে আগে যেখানে ড্রেজার বসিয়েছিলাম, এসিল্যান্ড স্যার সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।’

এ বিষয় জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি জায়গায় মার্কেট করার জন্য এসিল্যান্ড স্যার নিজেই বালু তুলে ভরাট করাচ্ছেন। মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম খান ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রাজু মাধ্যমে প্রতি ঘনফুট সাড়ে তিন টাকা চুক্তিতে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এসব বালু সরকারি জায়গা ভরাটের জন্য তোলা হলেও, তারা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রিও করেছেন। বালু তোলার বিষয়টি ডিসি স্যারসহ সবাই জানেন। স্যারের অনুমতিও আছে।’

বালু উত্তোলনের বিষয়ে মুকসুদপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সরকারিভাবে স্থানীয় কিছু লোকজন (ব্যবসায়ীরা) বালু ভরাট করছেন। তারা তাদের মতো করেই নিজ খরচে বালু ফেলছেন। হয়তো পরবর্তীতে খরচ সমন্বয় করে নিবেন। তারা আমাকে নদী থেকে বালু তোলার বিষয় বলেনি। তবে আমরা যখন ঘটনাস্থলে যাই। তখন তারা ড্রেজার মেশিন বন্ধ করে দেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয় জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয় আমার জানা নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর